সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দরে চলছে চরম দুর্নীতি ও অনিয়ম। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন, পণ্য লোড-আনলোডের সেবা না দিয়েই বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং তাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অথচ ব্যবসায়ীরা নিজেদের শ্রমিক দিয়েই এই কাজ সম্পন্ন করছেন।
স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের হিসাবে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রায় ১৫ লাখ টন পাথর আমদানির জন্য লেবার হ্যান্ডলিং ফি বাবদ ২২ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে। এর মধ্যে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান খুলনার হোসনেয়ারা এন্টারপ্রাইজ কোনো সেবা না দিয়েই নিয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা।
তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে মূলত ভারত থেকে কয়লা, পাথর, চুনাপাথর, এবং ফল আমদানি হয়। তবে আমদানির ৯৮ শতাংশই পাথর। নিয়ম অনুযায়ী, বন্দরে লোড-আনলোডের জন্য স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে ঠিকাদার শ্রমিক নিয়োগ করে সেবা দেওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে ব্যবসায়ীদের নিজের শ্রমিক দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে।
ব্যবসায়ী নাসির আহমদ বলেন, “আমরা টনপ্রতি ১৪৬ টাকা ফি দিচ্ছি, অথচ নিজের খরচে শ্রমিক দিয়ে কাজ করাচ্ছি। এভাবে লোড-আনলোডে দ্বিগুণ খরচ হচ্ছে।” একই অভিজ্ঞতার কথা জানান আব্দুল আলীমও। তিনি বলেন, “গত সাত বছরে বন্দরে ঠিকাদার বা তার শ্রমিকের দেখা পাইনি।”
২০১৭ সালে স্থলবন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়। সেই সময় থেকেই মেসার্স হোসনেয়ারা এন্টারপ্রাইজ নামক প্রতিষ্ঠানটি ঠিকাদার হিসেবে নিযুক্ত হয়। ২০২২ সালের ২৭ এপ্রিল এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নতুন চুক্তি করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, ব্যবসায়ীরা টনপ্রতি ১৪৬.৩৪ টাকা ফি দিচ্ছেন। কিন্তু ঠিকাদার চুক্তি অনুযায়ী টনপ্রতি মাত্র ৭০.৫৪ টাকা পাচ্ছেন। বাকি ৭৫.৮০ টাকা জমা হচ্ছে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের তহবিলে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, লেবার হ্যান্ডলিং সেবা না দিয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এই পুরো টাকার বড় অংশ আত্মসাৎ করছে।
তামাবিল পাথর আমদানি গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা লিয়াকত আলী। তার সঙ্গে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের আঁতাত ছিল। ব্যবসায়ীরা কোনো অভিযোগ করলেই তাদের নাজেহাল করা হতো।
সম্প্রতি পরিস্থিতি বদলেছে। পলাতক লিয়াকত আলীর জায়গায় বিএনপির জেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম শাহপরান নতুন কমিটি গঠন করেছেন। তবে নতুন নেতৃত্ব নিয়েও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সেবা নিশ্চিতের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তবে স্থলবন্দরের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান বলেছেন, “বন্দর থেকে আয়ের উৎস হিসেবে এই ফি গুরুত্বপূর্ণ। আইন অনুযায়ী কিছু করা যাচ্ছে না।”