কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বর্তমানে ক্যানসার, হৃদরোগ এবং স্নায়বিক অবক্ষয়ের মতো গুরুতর রোগের চিকিৎসায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আইসোমরফিক ল্যাবস এআই ব্যবহার করে একটি নতুন ওষুধ আবিষ্কার করেছে, যার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ এ বছরের শেষের দিকে শুরু হতে পারে। সম্প্রতি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা স্যার ডেমিস হাসাবিস।
২১ জানুয়ারি সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে এক সাক্ষাৎকারে ডেমিস হাসাবিস বলেন, “আমরা ক্যানসার, হৃদরোগ এবং স্নায়বিক অবক্ষয়ের মতো বড় বড় রোগের দিকে নজর দিচ্ছি। আশা করছি, এ বছরের শেষের দিকে আমাদের প্রথম ওষুধ হাতে পাব।”
আইসোমরফিক ল্যাবসের মূল লক্ষ্য হলো ওষুধ আবিষ্কারের দীর্ঘ সময়ের প্রক্রিয়াকে সংক্ষিপ্ত করা। সাধারণত, একটি ওষুধ তৈরিতে পাঁচ থেকে দশ বছর সময় লাগে, কিন্তু এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে এই সময়ের পরিমাণ দশগুণ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে, এমন আশা ব্যক্ত করেছেন হাসাবিস। এছাড়াও, এআইয়ের সাহায্যে ওষুধ তৈরির ব্যয়ও উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব হবে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন বয়ে আনবে।
আইসোমরফিক ল্যাবস ২০২১ সালে গুগলের এআই গবেষণা শাখা ডিপমাইন্ড থেকে আলাদা হয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তবে এটি এখনো অ্যালফাবেটের অধীন একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে এলি লিলি এবং নোভার্টিসের মতো বড় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির সঙ্গে ছয়টি প্রকল্পে কাজ করছে, যার উদ্দেশ্য হলো ওষুধ তৈরির কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং খরচ কমানো।
ডেমিস হাসাবিস আরও জানান, তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো কৃত্রিম সাধারণ বুদ্ধিমত্তা (AGI) তৈরি করা, যা মানব মস্তিষ্কের মতো সব বৌদ্ধিক সক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারবে। যদিও এটি তৈরিতে আরও পাঁচ থেকে দশ বছর সময় লাগতে পারে। তিনি বলেন, “আমরা এমন এক ভবিষ্যৎ কল্পনা করছি, যেখানে কয়েক বিলিয়ন এআই এজেন্ট গ্রাহক ও বিক্রেতার পক্ষ থেকে আলোচনার মাধ্যমে কাজ করবে।”
তবে, এআই প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এর সম্ভাব্য ঝুঁকিও সামনে আসছে। হাসাবিস সতর্ক করে বলেন, যদি এআই প্রযুক্তি ভুল মানুষের হাতে চলে যায় বা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তবে এটি মানবসভ্যতার জন্য বড় ধরনের হুমকি হতে পারে। তাই, প্রযুক্তির সঠিক নিয়ন্ত্রণ এবং এর নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
ডেমিস হাসাবিস মনে করেন, এআই প্রযুক্তি বিকাশকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আরও সমন্বয় থাকা প্রয়োজন, বিশেষত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরির ক্ষেত্রে, যাতে এটি মানবকল্যাণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে ওষুধ তৈরির সময় এবং ব্যয় কমানোর উদ্যোগ জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে পারে। ডেমিস হাসাবিসের নেতৃত্বে আইসোমরফিক ল্যাবস এমন একটি ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছে, যেখানে কঠিন রোগগুলোর সমাধান আগের চেয়ে অনেক সহজ এবং কার্যকর হবে। এআই প্রযুক্তির এই ব্যবহারে মানবজাতির জন্য এক আশার আলো দেখাচ্ছে, যা কোটি কোটি মানুষের জীবন বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।