ভারতের বিজেপি এমপি এবং বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াতের সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘ইমার্জেন্সি’ বিশ্বব্যাপী বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। সিনেমাটি ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ১৯৭৫ সালের জরুরি অবস্থার পটভূমিতে তৈরি, যা শুধু রাজনৈতিক বিতর্কই নয়, আন্তর্জাতিক স্তরে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।
‘ইমার্জেন্সি’ একটি আংশিক বায়োপিক, যেখানে কঙ্গনা রানাওয়াত নিজেই ইন্দিরা গান্ধীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সিনেমায় ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ এবং ১৯৮৪ সালে ‘অপারেশন ব্লু স্টার’-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনাও চিত্রিত হয়েছে।
তবে, সিনেমাটির প্রদর্শনের সঙ্গে সঙ্গেই এটির বিরুদ্ধে বিতর্ক শুরু হয়েছে। ব্রিটেনের শিখ গোষ্ঠী অভিযোগ তুলেছে যে, ছবিতে খালিস্তানি নেতা জার্নেইল সিং ভিন্দ্রানওয়ালের মুখে এমন কিছু সংলাপ বসানো হয়েছে, যা তিনি কখনো বলেননি। এর ফলে, ব্রিটেনের কিছু সিনেমা হল ‘ইমার্জেন্সি’ ছবির প্রদর্শন বাতিল করেছে এবং দেশটির বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশে ছবিটি বাণিজ্যিকভাবে মুক্তি না পেলেও, শেখ মুজিবুর রহমানের চরিত্রের কিছু অংশ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। সিনেমায় শেখ মুজিবের চরিত্রে কলকাতার অভিনেতা ঋষি কৌশিক অভিনয় করেছেন। একটি দৃশ্যে, মুজিবকে বলতে শোনা যায়, “ভারতমাতা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছেন। আজ আমরা শপথ নিচ্ছি, যতদিন এখানে ব্রহ্মপুত্রের পানি বইবে, যতদিন বাংলা বলব, ততদিন আমরা ভারতমাতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে যাব।”
এতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং ভারতের ভূমিকা নিয়ে একধরনের বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই এই বক্তব্যকে বাংলাদেশের সংবেদনশীলতার পরিপন্থী হিসেবে দেখছেন।
ব্রিটেনে শিখ গোষ্ঠীগুলোর মূল অভিযোগ হলো, সিনেমায় ভিন্দ্রানওয়ালের সংলাপটি ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। তারা দাবি করেছে, ভিন্দ্রানওয়াল কখনোই “আপনার দল ভোট চায়, আমরা চাই খালিস্তান” এমন কথা বলেননি। এই ভুল উদ্ধৃতির কারণে ব্রিটেনের শিখ সম্প্রদায় সিনেমাটির প্রদর্শন প্রতিরোধ করেছে এবং বেশ কয়েকটি সিনেমা হল ছবিটি প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
এ বিষয়ে, ভারত সরকার ব্রিটেনের কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছে যে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা রাখা উচিত এবং যারা এই সিনেমার প্রদর্শনে বাধা দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
বাংলাদেশের সোশ্যাল মিডিয়াতেও ‘ইমার্জেন্সি’ ছবির প্রতি নানা প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেক ব্যবহারকারী ছবির অংশবিশেষের সমালোচনা করেছেন, বিশেষ করে যেখানে শেখ মুজিবের চরিত্রকে বিতর্কিতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “এটা ভারতের প্রোপাগাণ্ডার সিনেমা। কঙ্গনা তার ‘ইমার্জেন্সি’ ছবিতে শেখ মুজিবকে অপদস্থ করেছে।” অন্যদিকে, প্যারিসে বসবাসকারী রাজনৈতিক অ্যাক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য মন্তব্য করেছেন, “এটা ভারতের জন্য খুবই ক্ষতিকর, এবং মুজিবের প্রতি অপমানজনক।”
‘ইমার্জেন্সি’ ছবিটি শুধু একটি সিনেমা নয়, এটি রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন দেশেই এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং বিতর্ক চলছে, যা এই ছবির আন্তর্জাতিক প্রভাব এবং তার সামাজিক-পারিপার্শ্বিক প্রেক্ষাপটের গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।